বিজুর প্রধান আকর্ষণ ‘পাজন’, কত ধরনের সবজি থাকে এতে

   

বিজুর প্রধান আকর্ষণ ‘পাজন’, কত ধরনের সবজি থাকে এতে

প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৯: ০০
বিজুর প্রধান আকর্ষণ পাহাড়ি সবজির পদ পাজন






পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, সাংলান, সাংক্রাই, সাংগ্রাইং, বিহু, পাতা ও চাংক্রান উৎসবে অতিথি আপ্যায়নে ঐতিহ্যবাহী অনুষঙ্গ পাঁচন। পাহাড়িদের কাছে যা ‘পাজন’ নামে পরিচিত। আজ রোববার চাকমা সম্প্রদায়ের বিজুর দ্বিতীয় দিনে অতিথি আপ্যায়নের মূল পদ এই পাজন।

কত ধরনের সবজি থাকে পাজনে? জানতে চাইলে কেউ বলেন, ৩০ রকমের, কেউ ৪০ রকমের। তবে ৩০ রকমের সবজির কম দিলে পাজন রান্নাই জমে না। আর এসব সবজির বেশির ভাগ মানে, ৯০ শতাংশই বন্য পরিবেশে জন্মায়।

পাহাড়িরা বিশ্বাস করেন, পাজন খেলে রোগমুক্তি হয়। লেখক ও শিক্ষাবিদেরাও পাজনের ঔষধি গুণের কথা জানালেন। গতকাল শনিবার রাঙামাটি শহর ও বিভিন্ন উপজেলার অর্ধশতাধিকের বেশি বাজারে বিজুর হাট বসেছিল। প্রতিটি হাটে পাজনের জন্য সবজি বিক্রি হয়েছে। নানা ধরনের কন্দ, আলু, ফুল, পাতা, গাছের ডগাসহ বিচিত্র সব সবজি কিনতে ব্যস্ত ছিলেন ক্রেতারা।


বিজুর প্রধান আকর্ষণ পাহাড়ি সবজির পদ পাজনছবি।

পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, সাংলান, সাংক্রাই, সাংগ্রাইং, বিহু, পাতা ও চাংক্রান উৎসবে অতিথি আপ্যায়নে ঐতিহ্যবাহী অনুষঙ্গ পাঁচন। পাহাড়িদের কাছে যা ‘পাজন’ নামে পরিচিত। আজ রোববার চাকমা সম্প্রদায়ের বিজুর দ্বিতীয় দিনে অতিথি আপ্যায়নের মূল পদ এই পাজন।

কত ধরনের সবজি থাকে পাজনে? জানতে চাইলে কেউ বলেন, ৩০ রকমের, কেউ ৪০ রকমের। তবে ৩০ রকমের সবজির কম দিলে পাজন রান্নাই জমে না। আর এসব সবজির বেশির ভাগ মানে, ৯০ শতাংশই বন্য পরিবেশে জন্মায়।

পাহাড়িরা বিশ্বাস করেন, পাজন খেলে রোগমুক্তি হয়। লেখক ও শিক্ষাবিদেরাও পাজনের ঔষধি গুণের কথা জানালেন। গতকাল শনিবার রাঙামাটি শহর ও বিভিন্ন উপজেলার অর্ধশতাধিকের বেশি বাজারে বিজুর হাট বসেছিল। প্রতিটি হাটে পাজনের জন্য সবজি বিক্রি হয়েছে। নানা ধরনের কন্দ, আলু, ফুল, পাতা, গাছের ডগাসহ বিচিত্র সব সবজি কিনতে ব্যস্ত ছিলেন ক্রেতারা।

রাঙামাটির শিক্ষাবিদ মংসানু চৌধুরী ও লেখক সুগত চাকমার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রাচীনকাল থেকে পাহাড়িদের সামাজিক উৎসবে মূল আকর্ষণ পাজন। অতিথিদের বিজু উৎসবে আপ্যায়ন শুরু হয় পাজন দিয়ে। শত বছর আগে পাহাড়িরা জুম ও প্রাকৃতিক বন থেকে সবজি সংগ্রহ করে পাজন রান্না করতেন। সংগ্রহ করা সেসব সবজির মধ্যে ৯০ শতাংশ ঔষধি গুণ রয়েছে। পাহাড়িদের বিশ্বাস, পাজন খেলে রোগমুক্তি হয়।

বাঙালির পাঁচনের সঙ্গে শব্দগত মিল থাকলেও পাহাড়ের পাজন রান্নার পদ্ধতি একেবারেই আলাদা। বাঙালি রান্নায় পাঁচনে আমিষ দেওয়ার রীতি নেই। কিন্তু পাহাড়ে পাজনে অবশ্যই শুঁটকি মাছ দিতে হবে। এ জন্য কয়েক মাস আগে থেকে বড় মাছ শুকিয়ে রাখা হয়। এ ছাড়া কাঁচা কাঁঠাল, আম, তারা, বেতাগী (বেতের গোড়ার অংশ), বেত প্রজাতির চাংকুল, কাট্টোল ডিঙি, বুনো আলু, কন্দ, বিভিন্ন ধরনের ফুল সংগ্রহ করে সবাই উৎসবের আগে।


বিজুর আগে পাহাড়ে পাজন রান্নায় নানা প্রস্তুতি চলে। বিজুর আগে অনুষ্ঠিত হয় পাজন রান্নার প্রতিযোগিতাও। রাঙামাটির বিভিন্ন এলাকায় পাজন রান্নার প্রতিযোগিতায় অংশ নেন নারীরা। কার পাজন বেশি সুস্বাদু, এ নিয়ে চলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা। রাঁধুনিদের মতে, পাজন রান্না সূক্ষ্ম শিল্পের মতো। প্রতিটি বাড়িতেই এই পদটি সুস্বাদু করার জন্য রাঁধুনিতে বিশেষ যত্ন থাকে।

সংস্কৃতি গবেষক ও শিক্ষাবিদ মংসানু চৌধুরীর মতে, পাজন রান্না ও খাওয়ার প্রচলন হাজার বছর আগে। আগে পাহাড়িরা সবাই জুমিয়া ছিলেন। সে জন্য জুমের সবজির ওপর নির্ভরশীল ছিলেন তাঁরা। পাহাড়িরা জানেন জুমের উৎপাদিত সবজির ঔষধি গুণ রয়েছে। সে জন্য জুমের সব সবজি মিশিয়ে রান্না হয় পাজন। তাঁরা বিশ্বাস করেন, পাজন খেলে শারীরিকভাবে সুস্থ ও রোগমুক্ত থাকা যায়।




চাকমা জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রচলিত আছে বিজু উৎসবের দিন কারও বাড়িতে গেলে অবশ্যই পাজন খেতে হবে। কেবল একটি বাড়িতে নয়, খেতে হবে অন্তত ১০টি বাড়িতে। না হয় পরের জন্মে মানবজন্ম নাও হতে পারে।

পাজন ছাড়াও প্রতিটি বাড়িতে বিজু উপলক্ষে তরমুজসহ নানা ফল, বিন্নি চালের পিঠা, মটর ডাল দিয়ে তৈরি খাবার, দই ও নানা ধরনের পানীয় থাকে।

আজ রোববার পাহাড়ে ত্রিপুরাদের উৎসব শুরু হচ্ছে। উৎসবের প্রথম দিনে দল বেঁধে পিঠা তৈরি ও গরাইয়া নৃত্য, দ্বিতীয় দিনে অতিথি আপ্যায়ন ও তৃতীয় দিনে বৃদ্ধদের গোসল করানোর রীতি পালন করা হয়। একই দিনে মারমাদের উৎসব শুরু হবে। উৎসবের প্রথম দিনে ফুল ভাসানো ও বাড়িঘর সাজানো হবে। দ্বিতীয় দিনে অতিথি আপ্যায়ন, তৃতীয় দিনে পানি উৎসব ও চতুর্থ দিনে বর্ষবরণ করবেন তাঁরা।

Post a Comment

0 Comments